Monday, April 23, 2018

বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মানুষগুলোর কষ্টের কথা

আমাদের বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মানুষগুলোর কষ্টের কথা কেউ জানেনা। বাংলাদেশের নিভৃত পল্লী, অবহেলিত জনপদ বা প্রত্যন্তাঞ্চল বলতে যতগুলো গ্রাম/ইউনিয়ন রয়েছে তার মধ্যে মাদারীপুর জেলাধীন কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন অন্যতম। ইউনিয়নটির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত আড়িয়ালখা নদী, পূর্বে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সেও এক বিশাল খাল দ্বারা দ্বিখন্ডিত বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন।
এই বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে যে গ্রামটি সে গ্রামেই জন্ম নিয়েছিলেন ৭০ এর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করা এম সি এ (এম পি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডঃ মতিউর রহমান (বর্তমান খাসের হাট হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম শফিজ উদ্দিন এর নাতি, খাসেরহাট তথা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের সর্ব প্রথম শিক্ষা গুরু পণ্ডিত স্যারের গর্বিত কনিষ্ঠপুত্র এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিউজিল্যান্ড নিবাসী হানিফ মাহমুদের চাচাত ভাই)।
এই মরহুম এডঃ মতিউর রহমান যিনি ৭০ এর নির্বাচনের পর ১৯৭১ এর পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার লক্ষে ভারতের চাদপাড়ায় "চাদপাড়া শরণার্থী শিবির" স্থাপন করে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় খাদ্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আমি নিজেও সে ক্যাম্পের একজন মুক্তিযোদ্ধা। দিন বদলে যায়, মানুষ ভুলতে শুরু করে সোনালী অথবা দুঃসময়ের অতীত। আমরাও ভুলে গেছি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডঃ মতিউর রহমানের নাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের মহান ইতিহাস।
বলছিলাম অবহেলিত জনপদ বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চির বঞ্ছিত অভাবী দুর্দশাগ্রস্থ বঙ্গবন্ধু ও নৌকা প্রেমী হতভাগা মানুষের প্রতিদিনের জীবনের করুন ইতিবৃত্ত।
সেই শিশুকালে গামছা পরে অথবা পানিতে সাতরিয়ে দূর দূরান্ত থেকে খাসের হাট স্কুলে অ আ ক খ পড়তে যেতাম। সকালে যেতাম আর সেই সন্ধায় ফিরতাম। না সড়ক, না গাড়ি, না নৌকা, সেতু, না সাঁকো কিছুই ছিল না। বিদ্যুতের তো প্রশ্নই ওঠেনা। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৭ বছর। এই সবে মাত্র সৈয়দ আবুল হোসেনের শেষ মন্ত্রীত্বকালীন সময়ে কোন কোন গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের আলো জ্বলেছিল।
১৭ বছর ইন্টারনেটে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ব্লগিং করছি কিন্তু দেশের বাড়ী যেয়ে বিদ্যুতের আলো চোখে দেখিনি। আর আমার জন্মস্থান দক্ষিন আকাল বরিশে মোটেই কোন সড়ক বা বাঁশের সাঁকোও ছিল না। কয়েক বছর আগে চেয়ারম্যান সালাম তালুকদারের বদৌলতে এবং সৈয়দ আবুল হোসেনের দয়ায় একটি সড়ক হয়েছে বটে। এখানে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের কৃতিত্বের কিছু নেই; তিনি কিছুই করেন নি। শুধু মঞ্চে বড় বড় বক্তৃতা দিয়ে মাইক ফাটানো ছাড়া আমরা কিছু দেখিনি বা শুনিনি।
যেহেতু আমরা চির বঞ্ছিত। বঞ্চিত বিদ্যুৎ থেকে, সড়ক থেকে, ব্রীজ কাল্ভারট থেকে, সরকারী বেসরকারী সকল সাহায্য অনুদান থেকে; বঞ্ছিত মহান স্বাধীনতার ফসল থেকে। এর মূল কারনই ছিল যে মরহুম এডঃ মতিউর রহমানের পরলোকগমনের পরে কেউ আর আমাদের দিকে ফিরে তাকাননি।
এ বাঁশগাড়ি নিয়ে কেউ কোন ভালো সংবাদও কোন পত্র/পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম/ টিভি মিডিয়ায় কোন কারনেই প্রচার করেনি। প্রচার করেছে মাত্র সেদিন আড়িয়াল খাঁ সেতু উদ্বোধনের সময়। এ সেতু নির্মাণে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের কোন কৃতিত্ব নেই বা ছিল না। তিনি হঠাৎ বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার দয়ায় সাংসদ হয়ে ঘোষণা দিলেন, তিনিই কালকিনি উন্নয়নের প্রবক্তা এবং রুপকার! কি অদ্ভূত ও তাজ্জব ঘটনা। নাসিম সাহেব শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য আড়িয়াল খাঁ সেতুর নামকরন করলেন "শেখ লুতফর রহমান সেতু" । কত চমৎকার তোষামোদি ও তেল মালিশকরণীয় প্রথা! নেত্রীকে খুশি করার জন্য বংগবন্ধুর গর্বিত পিতা মাদারীপুরের তৎকালীন শিক্ষক শেখ লুতফর রহমানের নামে আড়িয়াল খাঁ সেতু নামকরনের যুক্তি কোথায়? কোথায় গোপালগঞ্জ এবং কোথায় বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন?
অন্যদিকে বলতে গেলে যদিও শুনতে খারাপই লাগবে যে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধুর গর্বিত পিতা মরহুম শেখ লুতফর রহমানের কি অবদান রয়েছে?
সেতো জাতিরজনকের পিতা এবং বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যোন্নয়নে জীবনের সব কিছু বিলিয়ে দেয়া হতভাগিনী শেখ হাসিনার গর্বিত দাদাজান। এই নিভৃত পল্লী এলাকার এপার ওপার সংযোগের ক্ষেত্রে কেন সামান্য একটি সেতুর নামে তাঁর সন্মানিত নাম ব্যবহার করে আমরা তাকে আরো খাটো করছি? এ কথা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একবারো ভেবেছিলেন বা ভাববার অবকাশ ছিল অথবা ভাবতে দেয়া হয়নি !
চাটুকারীতা আজ এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে দেশ জাতি ও দেশের মানুষের চিন্তা চেতনা বুদ্ধি জ্ঞান রুচিবোধ ও স্বাভাবিক ইচ্ছে আবেগ অনুভূতির বাইরে গিয়ে সরকারী সিদ্ধান্ত মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কেউ ভাবেনও না। সবাই খুব খুশি । কেউ ভাবছেন না যে আড়িয়াল খাঁ সেতুর নাম বঙ্গবন্ধুর পিতার নামে করার আদৌ কোন যুক্তিগত কারন আছে কি নেই?
এই ক্ষুদ্র সেতুটি হতে পারতো মহান স্বাধীনতার সফল সংগঠক, হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা গড়ে তোলার কারীগর বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডভোকেট মতিউর রহমানের (এম সি এ -সংসদ সদস্য ) অথবা হতে পারতো এই বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে/ খাসের হাটে ১৯৭১ সালে গ্রাম থেকে যুবকদের ডেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন দেয়া এবং পরবর্তীতে ভারতে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র হাতে দেশ স্বাধীন করার লক্ষে ঝাপিয়ে পরে জীবন দানকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল হক শিকদার (বীর বিক্রম ) এর নামে । এখানে সৈয়দ আবুল হোসেন নিজে এই সেতু নির্মাণের সকল ব্যবস্থা / আয়োজন করে সেতু নির্মাণে সফল হলেও তিনি অনাহুতভাবে অযাচিত অহেতুক দুর্নাম ও মিথ্যা রোষানলের বলি হিসেবে চুপ করে থাকলেন।
সেতু নির্মাণের কৃতিত্ব উপর পর্যায়ে পৌছে গেল কালকিনি থেকে মাদারীপুরের বর্তমান বিনা ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের খাতায়।
বাহ রে স্বাধীনতা! বাহ রে হতভাগা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নবাসী। বাহ

No comments:

Post a Comment